সোমবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩১

কোজাগরী রাতের ফসল চুরি এক ভ্রান্ত ধারণা

বিপ্লব গোস্বামী

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১৩ অক্টোবর ২০২২

কোজাগরী রাতের ফসল চুরি এক ভ্রান্ত ধারণা

বিপ্লব গোস্বামী

শারদীয় দূর্গাপূজার পরবর্তী পূর্ণিমাই হচ্ছে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন।যুগ যুগ ধরে ঐদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি বাড়ি ধন-সম্পদ যশ-ঐশ্বর্য ও সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ঐদিন লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে সারা রাত জেগে থাকলে দেবী লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকেই সৌভাগ্যের বর প্রদান করেন।এমনই রীতি মেনে যুগ যুগ ধরে বরাক উপত্যকার ঘরে ঘরে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা চলে আসছে।

 আমাদের বরাক উপত্যকায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে ফসল চুরির একটা রীতি বা ভ্রান্ত ধারণা আছে।যখন ছোট ছিলাম তখনকার দিনে ফসল চুরির রীতিটার খুব বেশি প্রচলন ছিল।মনে পড়ে যখন ছোট ছিলাম তখন কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার রাতে পাড়ার ছেলেদের সাথে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি প্রসাদ খেতে যেতাম।সেই সঙ্গে তখনকার সময়ের একটা প্রচলিত রীতি মেনে একবার এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ফসল চুরি  করে ছিলাম।এখনো স্পষ্ট মনে আছে একবার কোজাগরীর রাতে প্রতিবেশী রায় বাড়ি থেকে হলুদ চুরি করেছিলাম।সেই রাতের ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারিনি।তখন বয়স কত হবে বড়জোর দশ বা এগারো।

প্রতিবেশী সঙ্গী বাপ্পন আমাকে সাথে করে নিয়ে যায়।আমি প্রথমে একদম রাজি ছিলাম না চুরি করতে কিন্তু সে বুঝিয়েছিল কোজাগরী রাতে চুরি করতেই হয়।বয়স কম ছিল ওর যুক্তিতে রাজি হয়ে যাই।সে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যায় রায় বাড়ির সবজি বাগানে।খুঁজে খুঁজে বের করে হলুদ গাছ।কারণ প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ঐরাতে হলুদ চুরি করতে হয়।আমার তো ভয়ে হাত-পা কাঁপছিলা।চুরি সে'ই করেছিল।চুরির ভাগটা আমাকেও দিয়েছিল।আজো ভুলিনি , সে যখন চুরি করছে তখন আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল।ভয়ে কত জন ভগবানকে যে ডেকেছি তা গুণে শেষ করা যাবে না।সেদিনের অনুশোচনা আজো ভুলতে পারিনি।

তখনকার দিনের একটা রীতি ছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার রাতে পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে ফলস চুরি করা।এনিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা ছিল কোজাগরীর রাতে প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে শস‍্য বা ফসল চুরি করলে লক্ষ্মীদেবী সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ প্রদান করেন।কোথায় কোথায় চুরি করা ফসল বা শস্য ফসল-মালিকের বাড়িতে রেখে আসারও রীতি ছিল।এছাড়াও কোথাও কোথাও প্রতিবেশীদের বাড়ির জিনিস পত্র লুকিয়ে রাখারও একটা রীতি ছিল।

যদিওবা এইকালে বরাক উপত্যকার গ্ৰামে গ্ৰামে কোজাগরীর রাতে ফসল চুরি করার একটা রীতি ছিল কিন্তু কি ভাবে এর প্রচলন হলো কোন পুস্তকে এর প্রমাণ পাওয়া যায় না।এই ফসল চুরির শাস্ত্রীয় কোন ব‍্যাখাও নেই।কবে থেকে এই প্রথার প্রচলন তাও সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারে না।কোথা থেকে কিভাবে এই ফসল  চুরির রীতিটা শুরু হয়েছে তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভ্রান্ত ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে।এখনকার ছেলে মেয়েদের কোজাগরীর রাতে ফসল চুরি করতে দেখা যায় না।এমন কি এখন আর আগের মতো পাড়ার ছেলে মেয়েদেরকে দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসাদ খেতেও দেখা যায় না।এখনকার ছেলে মেয়েরা নিজেকে নিয়ে মোবাইলে ব‍্যস্ত থাকে।যদিও বা এখনকার ছেলেমেয়েদেরা সামাজিকতা ভুলে যাচ্ছে।তবু ফসল চুরির রীতিটা পরিবর্তন হওয়া খুবই খুশির বিষয়।কেননা সেসময়ের কোজাগরীর রাতের চুরির অভ‍্যাসটা পরবর্তী কালেও থেকেই যেত।