পি আর প্ল্যাসিড
সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই ফেসবুকে বাংলাদেশি বাঙালিদের মধ্যে বাংলার বদলে ইংরেজিতে সট্যাটাস দিতে দেখি। ইংরেজিতে এমন স্ট্যাটাসের ছড়াছড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। হ্যাশট্যাগ ব্যাবহারের মাধ্যমে ইংরেজিতে লেখা এই স্ট্যাটাসের বিষয় ছিল দু'টি। বলা যায়, অভিন্ন। যার একটি- #StepDownHasina এবং অন্যটি #StayWithSheikhHasina। হঠাৎ করে এমন স্ট্যাটাস দেখে আমি অনেকটা অবাকই হই। প্রথম দিকে এর কোন অর্থ বা কারণ বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বেলা শেষে এর উপর এক জরিপে দেখা যায়- প্রথম স্ট্যাটাসটি আসে ১ কোটি ১০ লক্ষ আইডি হোল্ডারের কাছ থেকে, আর দ্বিতীয়টি আসে ৪ কোটি ১ লক্ষ ১০ হাজার আইডি হোল্ডারের কাছ থেকে। সামাজিক সাইটে জরিপের এই ফলাফল দেখে প্রতীয়মান হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কি পরিমাণ মানুষ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এটাও অনুমেয় যে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন পর্যন্ত অনেক উপরেই রয়েছে।
মজার বিষয় হলো, নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো সচেতন মহলের কাছে শেখ হাসিনার নামটি এভাবে হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচারের কারণে ভিন্ন মাত্রায় গুরুত্ব পেয়েছে। কেউ শেখ হাসিনাকে পছন্দ কিংবা অপছন্দ যা-ই করুন, শেখ হাসিনা নামটি তাদেরকে মুখে উচ্চারণ করতে হচ্ছে, আর এই উচ্চারণ করা তাদের মনের মধ্যে রয়েছে বলেই প্রকাশ পাচ্ছে। আমি বিষয়টিকে পজিটিভ অর্থেই নিয়েছি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে আলাপ-আলোচনা, মিটিং-মিছিল, প্রচার-অপপ্রচার চলছে, এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শুধু যে এটা দেশের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ আছে এমনটা কিন্তু নয়। আন্তর্জাতিক পরিসীমায় যোগ হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। পৃথিবীর মোড়ল দেশ এবং শান্তি ও মানবতার জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনও হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে। ব্যাপারটি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও দেশের জনগণের জন্য মোটেও কোন শুভবার্তা বয়ে আনছে না।
লক্ষ্যণীয় যে, দেশের সংসদে না থাকা একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা- কর্মীরা বিদেশি শক্তিকে জোর করে ডেকে আনছেন দেশের ভিতর তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য সহযোগিতা করতে। দলটি অতীতে বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় আসীন থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এমন মঙ্গল কিছু করেনি যে, দেশের মানুষ তাদের বিগত পনের বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরেও ভোট দিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় বসাবে। যে কারণে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে বিদেশি সেইসব শক্তিকে বিশ্বাস করিয়ে দেশের ভিতর অগণতান্ত্রিকভাবে তাদের ক্ষমতায় বসানোর পরিবেশ তৈরি করতে বাধ্য করার অপচেষ্টা করে আসছে অনেকদিন ধরেই। বলা যায়, এসব কারণে দেশের বর্তমান সরকার অনেকটাই বিদেশিদের অযাচিত নানামুখি চাপের মধ্যে রয়েছে। বিদেশিদের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এর মধ্যে প্রতিনিধি দল এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি সরোজমিনে দেখে যাবার পর অনেকটাই যেন বিরোধী দলের কথা ও কাজে বিশ্বাস হারাতে বসেছে। বিপরীতে সরকারের পক্ষে তাদের মত প্রকাশেরও চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল অনেকটাই যেন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিতে থাকে ঢাকা শহরকে অবরোধ করতে। অনেকটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড করে নিজেদের জনপ্রিয়তা এবং পেশী শক্তি প্রদর্শন বা শো ডাউন করা। আমার বিশ্বাস দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণ কোনোভাবেই মন থেকে তাদের এসব কর্মসূচিকে সম্মতি জানাতে পারে না। উল্টো এসবে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়েছে, যে কারণে তারা তাদের কর্মসূচী দেখে হতাশ হচ্ছে। তারপরেও আমার মনে হয়েছে, বিদেশি শক্তির কাছে নিজ নিজ দলের অবস্থান এবং জনপ্রিয়তা প্রদর্শণের চেষ্টায় দেওয়া এসব কর্মসূচি ছিল বলার মতো।
এক দল সরকারে থেকে এবং আরেক দল সরকারের বাইরে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসলেও হঠাৎ করে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যেভাবে নিয়মনীতি না মেনে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি পালন করে, এতে তারা নিজেরাই যেন ল্যাজে গোবরে গোলমাল লাগিয়ে ফেলে। এসব করতে গিয়ে উভয় দলই তাদের পুরোনো চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে, তাতে সাধারণ জনগণ অবাকই হয়েছে।
সেদিন তারা ঢাকার ভিতর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে যেভাবে দেশের অভ্যন্তরে আগের মতো আগুন সন্ত্রাস করার মধ্য দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, এতে তাদের প্রতি বিদেশিরাও নাখোশ বলেই মনে হলো। যার জন্য এতোদিনের জল্পনা-কল্পনা, ইনভেস্ট যা-ই বলি না কেন, সব যেন তাদের নষ্ট হয়ে গেছে! এমনকি প্রত্যাশিত ফলও আর তাদের ঘরে না উঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলটির সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি ভোল পাল্টে বক্তব্যে দিয়েছেন। বিদেশিদের উপর বিষোদাগার করে বক্তব্যে বলেছেন, আমাদের শক্তি আমাদের দেশের জনগণ। বিদেশিদের উপর যেন আর তাদের কোন প্রকার আশা-ভরসা নেই। এতে বলতেই পারি, গাধা যে ঘোলা করে পানি খায়, এটাই তার প্রমাণ।
এদিকে আইএমআই নামের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা যাচাই করতে একটি জরিপ করেছে। ৫ হাজার লোকের উপর করা এই জরিপের ফলাফল প্রকাশও করা হয়েছে, যা দেখে বাংলাদেশ সরকার আনন্দে ভাসছে! অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৭০ ভাগ ভোট দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের আমলে দেশ ভালোভাবে চলছে- এর পক্ষে মত দিয়েছে। তার মানে বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে, এতে দেশের জনগণ খুশি।
বিষয়টির সত্যতা মেনে নিয়ে বলছি, দেশ আমাদের উন্নয়নের রোল মডেল হতেই পারে। কিন্তু জরিপের এই ফলাফল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতোটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই ঘটা করে বলা যায় না। দেশের মানুষ অনেক সহজ সরল, তারপর আবার ধর্মভীরু। অতীত ঘাটলে দেখা যাবে, ভোটাররা দিনে বলে এক কথা, রাতে বলে আরেক কথা। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বলবে এক কথা, ভোট দিতে গিয়ে ভিতরে ঘটাবে আরেক ঘটনা।
দেশে আগামী নির্বাচন যথাযথভাবে সঠিক, নিরপেক্ষ হলেও ফলাফল ঘোষণাকালে যদি বিদেশি অপশক্তি বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে বলতেই হবে- আমাদের ভাগ্যে দেখা যাবে, যেই লাউ, সেই কদু! আমাদের দেশে হ্যাশট্যাগ দিয়ে সামাজিক সাইটে কোনকিছু করে লাভ নেই। ফলাফল যে ভিন্ন হতে সময় লাগে না। সুতরাং ফলাফল ঘোষণার সময় রিমোট নিয়ন্ত্রণে যদি ভুল হয়, তাহলে ভুল হতে বাধ্য দেশ ও দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলও। এ নিয়ে যতো জরিপই করা হোক, তা মিথ্যা প্রমাণিত হতেই পারে। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা, দেশের আগামী নির্বাচন সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হোক- এটা সবারই একান্ত কামনা ও প্রত্যাশা।