সোমবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩১

নতুন শিক্ষাক্রম বাংলাদেশ সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত

সাহানাজ পারভীন -বরিশাল, বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৩ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১১:৩২, ২৩ আগস্ট ২০২৩

নতুন শিক্ষাক্রম বাংলাদেশ সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত

সাহানাজ পারভীন

শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বড় পরিবর্তন এনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন যে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, সেটিকে ভালো ও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকেই। কিন্তু তারা এ-ও বলেছেন, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্হায় সারা দেশে এই শিক্ষাক্রম কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, সেটা বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মুল ভূমিকায় থাকবেন শিক্ষকেরা। অথচ এখন পর্যন্ত দেশে শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। আবার শিক্ষকদের একটি বড় অংশের দক্ষতারও ঘাটতি রয়েছে। তাই যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি দক্ষতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক  স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্তায় বড় পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি অনুমোদন দিয়েছেন সরকার। নতুন শিক্ষক্রমে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক, নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে।প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বাকি শ্রেণি ̧গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু মূল্যায়ন শিখনকালীন কার্যক্রমের ভিত্তিতে এবং কিছু অংশের মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে হবে। ২০২৩ সাল থেকে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে।

২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পরিমর্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত নতুন পাঠ্যপুস্তক ও শিখন সামগ্রীর বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের ভুমিকাই সবচেয়ে বেশি  গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কারিকুলাম অনুযায়ী বেশির ভাগ বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বরের জন্য পরীক্ষা ও বাকি ৫০ শতাংশের ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে শ্রেণীকক্ষে। অর্থাৎ এখানেও শিক্ষকদেরই বিশাল ভূমিকা। নতুন শিক্ষাক্রমে চারটি ধর্মশিক্ষাসহ মোট ১০টি বিষয় রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মাধ ̈মিক বিদ্যালয় গুলোর বিদ্যমান পদগুলোয় যারা শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন তারা বাস্তবিক কারণেই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নন। যেমন গণিতের শিক্ষকই যে মাধ্যমিক পর্যায়ে গণিত করাচ্ছেন আর ইংরেজির শিক্ষকই যে ইংরেজি পড়াচ্ছেন এমনটি নয়। দেখা যাচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষকরা ইংরেজি পড়াচ্ছেন, কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক গণিত কিংবা বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন। এটি একটি বাস্তবতা, কিন্তু নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর জন্য একটি বিষয়ে একাধিক শিক্ষক এবং কোনো বিষয়ে শিক্ষক নেই এভাবে বণ্টন করা যাবে না। হিন্দুধর্ম শিক্ষা, খিধস্ট ধর্ম শিক্ষা ও বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয়ে না থাকলে ওই বিষয়ে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট ধর্মানুসারে শিক্ষককে তার নিজ বিষয়ের দায়িত্ব বণ্টনের পর অতিরিক্ত হিসেবে এ বিষয় গুলোর দায়িত্ব বণ্টন করা যেতে পারে। চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষক না থাকলে শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের ক্ষেত্রে আগ্রহী বা এ বিষয়ে দক্ষতা আছে এ ধরনের শিক্ষককে ওই বিষয়ের দায়িত্ব বণ্টনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে কে কোন বিষয়ে শেধণী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন তা বিন্যাস্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ তালিকা অনুসরণ করে তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জন্য বিষয় বণ্টন করেছেন। তালিকা অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের শিক্ষকদের জন্য বিষয় বণ্টন করে অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের ডাটা এন্ট্রি দিয়েছেন। অনলাইনে বিদ্যমান সব বিষয়ের শিক্ষককে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নির্বাচিত বিষয় গুলোর কোনো না কোনো বিষয়ের নাম এন্ট্রি দিয়েছেন। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ১০ হলে ১০ জন শিক্ষককে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ১০টি বিষয়ে বণ্টন করে দিতে হবে। একটি বিষয়ে একাধিক শিক্ষক এবং কোন বিষয়ে শিক্ষক নেই এভাবে বণ্টন করা যাবে না।শিক্ষক সংখ্যা ১০ জনের বেশি হলে ম্যাচিং তালিকা অনুযায়ী নতুন শিক্ষাক্রমের ১০টি বিষয়ে ১০ জনকে দায়িত্ব বণ্টনের পর অন্য শিক্ষকদের জন্যতালিকা অনুযায়ী বিষয় বণ্টন করতে হবে। শিক্ষক সংখ্যা ১০ জনের কম হলে ম্যাচিং তালিকা অনুযায়ী তাদের বিষয় বণ্টন করে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্যান্য বিষয় তাদের নিজ বিষয়, আগধহ ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বণ্টন করে দিতে হবে। বর্তমানে বাংলার শিক্ষকদেরনতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে বিষয় হবে বাংলা, ইংরেজি শিক্ষকদের ইংরেজি, গণিত শিক্ষকদের গণিত,ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষকদের বিষয় হবে বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও ভূগোল শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে বিষয় হবে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান বা আইসিটিতে প্রশিক্ষণপধাপ্ত বা আইসিটিতে দক্ষ যেকোনো বিষয়ের শিক্ষকদের বিষয় নতুন শিক্ষাক্রমে হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। শারীরিক শিক্ষা ও গার্হস্হ্যঅর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষকদের বিষয় নতুন শিক্ষাক্রমে হবে স্বাস্হ্য সুরক্ষা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বিষয় হবে ধর্ম শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষকদের বিষয় নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী হবে শিল্প ও সংস্কৃতি।বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক মাধ্যমিকে সব বিষয়ে না থাকা একটি বাস্তবতা। এটির জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়।তবে বেশির ভাগ শিক্ষকই ইংরেজি, গণিত বিষয়ে পাঠদান করতে চান প্রাইভেট টিউশনির জন্য। আর এজন্য কতৃপক্ষের আনুকূল্য পেতে হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে গ্রামীণ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোয় শিক্ষকদের এমনিতেই ঘাটতি রয়েছে, তারপর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকার তো পধশ্নই আসে না। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোয় রয়েছে অন্য ধরনের সমস্যা। ঢাকা সিটিসহ দেশের বড় বড় শহর এবং অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অঞ্চলে অবিস্হত সরকারি বিদ্যালয় গুলোয় রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক আর গ্রামীণ এলাকার প্রতিষ্ঠান গুলোয় রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমসংখ্যক শিক্ষক। তার পরও খোদ রাজধানীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক ধরন অনুসারে শিক্ষক পদায়ন করা নেই। এসব বিদ্যালয়ে এক বিষয়ের শিক্ষক আরেক বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখানে নতুন কারিকুলাম কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দিহান খোদ শিক্ষকরাই।

নতুন কারিকুলামে প্রশিক্ষণবিহীন কোনো শিক্ষক ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে ক্লাস নিতে পারবেন না। বিদ্যমান শিক্ষকদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে সমন্বয় করাতে প্রধান শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আগেই। নতুন শিক্ষাক্রমে মোট ১০টি বিষয় থাকছে। এর আলোকে বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক পদে কর্মরত শিক্ষকদের বিষয় নির্ধারণ করে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইএমআইএস ডাটাবেজ হালনাগাদ করতে বলা হয়েছিল। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে প্রণীত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের সাহায্যে শিখন কার্যক্রম হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের আগে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানরত শিক্ষকদের বিষয় নির্ধারণ করা পধয়োজন। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার আলোকে মাধ ̈মিক পর্যায়ে পাঠদানরত শিক্ষকদের বিষয় নির্ধারণ করে শিক্ষকদের ডাটাবেজ হালনাগাদ করার জন্য ইএমআইএস ওয়েবসাইটে একটি মডিউল করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান যাদের ইআইআইএন নম্বর আছে তারা ইএমআইএস ওয়েবসাইটে লগইনকরে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিষয় নির্ধারণ করেছেন।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী একজন শিক্ষক একই এলাকায় সর্বোচ্চ তিন বছর থাকতে পারেন। তবে সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ রাজধানীতে আছেন ২৬-২৭ বছর পর্যন্ত। ঢাকা সিটির সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোয় বিভিন্ন বিষয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক একই বিদ্যালয়ে কিংবা ঘুরেফিরে ঢাকার সরকারি বিদ্যালয় গুলোয় বছরের পর বছর পার করছেন। ঢাকায় মোট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৩৮টি।এ গুলোয় বর্তমানে ২১৯ জন শিক্ষক অতিরিক্ত আছেন। শুধু সামাজিক বিজ্ঞানেই অতিরিক্ত আছেন ৯৯ জন।এসব বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক পদ ১ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক ৭৯০ এবং সিনিয়র শিক্ষক ৭৯০ জন। অতিরিক্ত শিক্ষকের মধ্যে ৮৭ শতাংশই সিনিয়র শিক্ষক। বাকিরা সহকারী শিক্ষক। এটি আর এক ধরনের ক্ষতিকর বাস্তবতা। সবাই ঢাকায় থাকতে চান, চাওয়াটাই  স্বাভাবিক। সবাই ঢাকায় থাকলে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষার কী হবে? এ অসম অবস্থা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। কারণ শিক্ষক ̄সল্পতা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে আমাদের শিক্ষার্থীদের। যাদের জন্য এ বিশাল ব্যবস্থা তারাই যদি উপকৃত না হয় বরং ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে রাষ্টধ পরিচালিত এসব শিক্ষাপধতিষ্ঠানের প্রয়োজন কী? কোথাও এক-চতুর্থাংশ শিক্ষক কাজ করবেন আবার ঢাকার পধতিষ্ঠান গুলোয় উপচে পড়া শিক্ষক-এ কেমন বৈষম ̈? শিক্ষক ̄সল্পতা ও অতিরিক্ত শিক্ষক, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকা বা তার ধারেকাছেও না যাওয়া বিষয় গুলো শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাদানকে নিরুৎসাহিত করে প্রাইভেট, কোচিং সেন্টারে যাওয়াকে উৎসাহিত করছে। কাজেই এ বিষয়টিতে সমতা এবং  স্বচ্ছতা নিয়ে আসা সময়ের দাবি।

শিক্ষার মান উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজের সঙ্গে যুক্ত কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থায় যেতেই হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। সর্বোচ্চ ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকলে ভালো হয়। শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্যও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে দেশে সরকারি, কিন্ডারগার্ডেন, এনজিও পরিচালিত মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এ গুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ২কোটি। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৬ জন। শিক্ষার্থী ১ কোটি ৪১ লাখ ৪৪৫ জন। এই হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে সারা দেশে গড়ে ১ জন শিক্ষকের বিপরীতে ৩৯ জনের মতো শিক্ষার্থী আছে।

২০ হাজার ৬০০টি মাধ ̈মিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন। আর শিক্ষক ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫ জন। অর্থাৎ ১ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী প্রায় ৪২ জন। দেশে ৪ হাজার ৫৫১টি কলেজে মোট শিক্ষার্থী ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ২১০। আর শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন।নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ভিত্তিতে সারা বছর ধরে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। আর প্রথম সাময়িকী, দ্বিতীয় সাময়িকী বা অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে যে মূল্যায়ন হয়, সেটাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হয়; যা অপেক্ষাকৃত গতানুগতিক ও সহজ। কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য অধিক যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজন।

নতুন শিক্ষক্রম প্রণয়নের কাজে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, এটা ঠিক যে নতুন শিক্ষক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে। এ জন্য তাঁরা শিক্ষকদের সক্ষমতা তৈরিতে নানা পর্যায়ের সুপারিশ করেছেন।

এই বছর পরীক্ষামূলক শিক্ষাক্রম শুরুর সঙ্গে সারা দেশে শিক্ষক সহায়ীকা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে।এরপর শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণে এই বিষয়ও যুক্ত হবে। এই সময়ে যে শিক্ষকেরা অবসরে যাবেন, তাঁদের  স্হলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করে নতুন ব্যবস্হায় প্রশিক্ষিত করতে হবে।আর দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষকের সব ধরনের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিষয়টি যুক্ত করা হবে।

যদিও এর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল, শিক্ষাব্যবস্থায় চালু হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতি; কিন্তু সে গুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হলেও এখনো  ̧রুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক ভালো দিক আছে। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ এবং বিভিন্ন গবেষণার উঠে আসা বিষয় গ্রহণ করা হয়েছে।এ জন্য স্বাগত জানাই। এখন পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন না করলে কাক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। কারণ,এর আগে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত দক্ষ করতে না পারায় সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তাই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।