শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশে সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা কতটুকু

হীরেন পন্ডিত

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১০:৪১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা কতটুকু

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ সমরাস্ত্রই চীনের। তবে ধীরে ধীরে সামরিক খাত ছাপিয়ে চীন বাংলাদেশে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহায়তা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিনিয়োগ। বস্তুত চীন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি। বিভিন্ন দেশে চীন যেমন বিনিয়োগ করছে, তেমনি ঋণ সহায়তা দেওয়াসহ উন্নয়নেও অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য মেগা প্রকল্প বস্তবায়নে কাজ করছে চীন। হিসাব করলে চীনের পাল্লাই ভারী হবে। চীনের বিনিয়োগ ক্ষমতা, ক্রয়ক্ষমতা, বাণিজ্যিক লেনদেন প্রভৃতি ক্যাপাসিটি ভারত থেকে অনেক বেশি।

সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতাই বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কের ভিত্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য হারে অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীন গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়টিভকে অগ্রাধিকার দেয় এবং একটি নিরাপত্তা ধারণা প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন করে। যা একটি সাধারণ, ব্যাপক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই পদ্ধতির ওপর জোর দেয়।

সামরিক পরিপ্রেক্ষিতে চীন একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে যা প্রকৃতিগতভাবে প্রতিরক্ষামূলক। চীন নিজের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার সময় পারস্পরিক ভবিষ্যতের আলোকে একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার লক্ষ্য রাখে।

চীন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন স্তরে বিনিময় আরো জোরদার করতে আগ্রহী। এছাড়া প্রতিরক্ষা শিল্প ও সহযোগিতা আরো গভীর করা, বাণিজ্য, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি, নৌবাহিনীর জাহাজের পারস্পরিক পরিদর্শন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করতেও ইচ্ছুক চীন। চীন-মার্কিন সম্পর্ক, চীন-ভারত সম্পর্ক, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের আওতায় চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার বিষয়ে খোলামেলা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। বিশ্বে সামরিক শক্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন।

আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট মিলিটারি ডাইরেক্টে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। সমীক্ষায় স্থান নির্ণায়ক ১০০ পয়েন্টের মধ্যে চীন পেয়েছে ৮২ পয়েন্ট। সমীক্ষা অনুযায়ী, ‘বাজেট, সেনাসংখ্যা, বিমান এবং নৌবাহিনীর ক্ষমতার মতো বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে দেয়া নির্দিষ্ট পয়েন্ট বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে একটি সম্ভাব্য বিশ্বযুদ্ধে চীন সর্বোচ্চ শক্তিধর হিসেবে এগিয়ে থাকবে।

তবে সামগ্রিকভাবে চীন বিশ্বের প্রথম সামরিক শক্তি হলেও প্রতি বছর ৭৩২ বিলিয়ন ডলার বাজেটের সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, চীনের নৌবাহিনীতে রয়েছে ৪০৬ টি, রাশিয়ার ২৭৮ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ২০২ টি যুদ্ধ জাহাজ।

১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিয়ে যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হয়, তখন ১৫টি দেশের মধ্যে একমাত্র চীন তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী।

চীনের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির পরিসংখ্যান অথবা দুইদেশের মধ্যে চলতে থাকা দ্বিপাক্ষীয় চুক্তির সংখ্যা দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপ্তিটা আসলে বোঝা যায় না। চীন আর বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে ব্যাবসায়িক মাত্রার পাশাপাশি রাজনৈতিক আর কৌশলগত অনুষঙ্গও যোগ হয়েছে গত কয়েক দশকে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি যুগপৎভাবেই পশ্চিমের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সবসময়ই কোনো দেশের সাথে শত্রুতামূলক বা বৈরি সম্পর্কে না জড়িয়ে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি মেনে চলেছে। চীনও হয়তো আমাদের বন্ধু হিসেবে সেটা জানার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ চীনকে আশ্বস্ত করবে যে বাংলাদেশ সবার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চায় এবং কোনো নির্দিষ্ট পক্ষ বা জোটের সাথে বন্ধুত্ব চায় না।

আমরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা জাপান কাউকেই ছাড়তে পারবো না।  কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা রাখলে বাংলাদেশ যেরকম উন্নয়নের ধারায় রয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ অনেক সাহায্য পাচ্ছে বাংলাদেশের কারণে নয়, মূল কারণ হচ্ছে চীন যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। চীন যেন বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বা অনুমতি না পায়।

বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। চীন বাংলাদেশের আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা সার্কের পর্যবেক্ষক হয়েছে। সামরিক সম্পর্কের সূত্র ধরে সম্পর্কের সূচনা হলেও চীন ক্রমেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এক বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামরিক ও আর্থ-বাণিজ্যিক স্বার্থের বাইরে অন্য দিক থেকেও চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চর্চা করেছে। বিশেষত মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সমুদ্র সীমাসংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চীন গুররুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সাম্প্রতিককালে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও ভারত উদ্বিগ্ন। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে যে চীন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে দিয়ে ভারতকে ঘিরে রাখতে চায়। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বন্দর বানিয়ে ভারত মহাসাগরে চীনের কথিত ‘মুক্তার মালায়’ অন্তর্ভুক্তি নিয়েও ভারত উদ্বিগ্ন। ভারতের যুক্তি হলো, এ অঞ্চলে এর মধ্যেই তিনটি গভীর সমুদ্রবন্দর চীনা অর্থে ও চীনা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এ তিনটি সমুদ্রবন্দর হলো, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা ও কলম্বোয় দু’টি এবং পাকিস্তানের গাওদার গভীর সমুদ্রবন্দর। ভারতের আশঙ্কা, চীন বাংলাদেশেও গভীর সমুদ্রবন্দর বানিয়ে চীনের কথিত ‘মুক্তার মালা’ সমুদ্রনীতি বাস্তবায়ন করবে। ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদদের শঙ্কা, চীন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশকে তার যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনগুলোর ডক হিসেবে ব্যবহার করার আদর্শ স্থান মনে করতে পারে।

এ উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে সাগরদ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও রাডার পর্যবেক্ষণ স্থাপন করেছে। এদিকে সমুদ্রে চীনা বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়াতে ভারত ও আমেরিকা সম্প্রতি যে চুক্তি করেছে, তাতে মেরামতি ও রসদ সরবরাহসংক্রান্ত কারণে দুই দেশ পরস্পরের ভূমি, আকাশ ও নৌঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে। চীনা ড্রাগনকে ঠেকাতে তারা ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়। প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও ভারত ‘চীন ঠেকাও’ নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত জোটে যোগ দিয়েছে। বাজেট বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার কথা বলা হয়েছে।

সামরিক খাতের বাজেট আবারও বাড়ানোয় গত ১ দশকে প্রথমবারের মতো টানা ৩ বছর ধরে এই খাতে খরচ বাড়ানোর ঘোষণা এলো। আকারের দিক দিয়ে চীনের হাতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী এবং দেশটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ ও স্টেলথ বোমারু বিমানের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলছে।

বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হচ্ছে চীন। গত পাঁচ বছরে চীন থেকে যুদ্ধ বিমান, রণতরী, সাগরে টহলযান ও মিসাইল ক্রয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ ও চীনের অংশগ্রহণ শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী চীনের পিপলস আর্মি।

চীনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকা প্রতি বছর শুধু তার ফেডারেল ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ যে পরিমাণ বরাদ্দ রাখে, তার চেয়েও কম প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে চীন কীভাবে বেশকিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার সামরিক ক্ষমতার সমান হতে পারে? শুধু তাই নয়, চীন অনেক ক্ষেত্রেই এখন মার্কিন সামরিক সক্ষমতাকেও ছড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামরিক বাহিনীর দ্রুত সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এটি যে ব্যয়বহুল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু চীন সবসময়ই এ ব্যাপারটিকে গোপন রাখতে চায়। চীনের দাবি, তার সামরিক খরচ আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও কম।

চীনের সামরিক বাহিনী শুধু অঞ্চলভিত্তিক নিরাপত্তার জন্যই কাজ করছে। প্রশান্ত মহাসাগর এবং বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরই তাদের প্রধান কর্মকেন্দ্র। সরকার দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট হিসেবে যা ঘোষণা করে, সেটিকেই চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এখানে তথ্য কিংবা প্রমাণাদিও কোনো বালাই নেই।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাখাতে সহযোগিতায় বিদেশীদের আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিতে বিশেষ আগ্রহী। তারা বাংলাদেশকে আরও সমরাস্ত্র সরবরাহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহযোগিতা, যৌথ সামরিক মহড়া ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা করে। তবে বাংলাদেশ সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে এসব দেশের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা নেয়। বাংলাদেশ যাতে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে না যায়, সেটাও নিশ্চিত করতে চাইছে ভারত। সে কারণে দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতায় এখন বিশেষ আগ্রহী।

চীন ও ভারত দুই দেশের সাথেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ চীনের সাথে যুক্ত হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তা ঠিক নয়। বাংলাদেশ শুধু চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে তা নয়। চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের কাছ থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখনও সামরিক ব্যয়ের রেকর্ডের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের বয়স সাড়ে পাঁচ দশকের মতো। শুরুতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল সামরিক সহায়তাকেন্দ্রিক। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা হয়। এই কারখানা থেকে এখন সমরাস্ত্র তৈরি হচ্ছে। চীন থেকে যেসব সামরিক সরঞ্জাম আনা হয়, তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও বাংলাদেশে আছে এবং এগুলো কার্যকর। এ ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ বাংলাদেশের জন্য ব্যয়বহুল। চীনের ক্ষেত্রে তা নয়। এ ক্ষেত্রে সহজে ঋণ সুবিধাও পাওয়া যায়।

কেবল বাংলাদেশেই নয়; চীন অনেক দেশেই বিনিয়োগ করছে। চীন ও ইরান ২৫ বছরের কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এই চুক্তিতে ইরানের তেল-গ্যাস, ব্যাংকিং, টেলিকম, বন্দর উন্নয়ন, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং আরও কয়েক ডজন গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীন আগামী ২৫ বছরে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

শুরুতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল সামরিক সহায়তাকেন্দ্রিক। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা হয়। এই কারখানা থেকে এখন সমরাস্ত্র তৈরি হচ্ছে। চীন থেকে যেসব সামরিক সরঞ্জাম আনা হয়, তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও বাংলাদেশে আছে এবং এগুলো কার্যকর। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ সমরাস্ত্রই চীনের। তবে ধীরে ধীরে সামরিক খাত ছাপিয়ে চীন বাংলাদেশে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহায়তা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিনিয়োগ।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
--