মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, কার্তিক ৭ ১৪৩১

শেখ হাসিনার জাপান সফরে বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রাণের সঞ্চার হয়েছে

পি আর প্ল্যাসিড

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৮ মে ২০২৩

শেখ হাসিনার জাপান সফরে  বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রাণের সঞ্চার হয়েছে

পি আর প্ল্যাসিডঃ জাপান প্রবাসী লেখক - সাংবাদিক সম্পাদক-বিবেকবার্তা

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা জাপান সরকারের আমন্ত্রণে জাপান সফর করেন। বলা যায় আাগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি ছিল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সফর। বলছেন সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণকারীরা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাপান একটি পরিক্ষীত বন্ধু দেশ। বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি জাপান সরকার এবং দেশটির জনসাধারণের অকৃত্রিম ভালোবাসা অফুরান। স্বাধীনতার পর জাপানের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বি-পাক্ষিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা অতঃপর চুক্তি সম্পাদন করতেই সরকার প্রধান জাপান এসেছিলেন। তাঁর জাপানে এবার তিনদিনের সফর সফল হয়েছে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এবার জাপান সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যদায় আপ্যায়ন করেছে, এতেই ধরে নেয়া যায় জাপান আমাদের দেশকে বা সরকার প্রধানকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছে। এবারের সফরে জাপানের সাথে বাংলাদেশ সরকারের মোট আটটি বিষয় চুক্তি সম্পাদিত হয় যা আগে কোনো সরকারের সময়কালে সম্পাদিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর অল্পদিনের এই সফরে নানা বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন আমাদের জন্য সুখের খবর বয়ে আনলেও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিশ্বের অনুন্নত দেশ গুলোতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে জাপান একটি উল্লেখযোগ্য দেশ হলেও আমাদের দেশে বিনিময়ে তাদের দৃষ্টি অনেক পিছিয়ে।
 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর ক্ষেত্রে জাপানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এজন্য অবশ্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, জাপানে তাদের দূতাবাস কর্তা, সর্বোপরি জাপানে বসবাসকারী সেই সকল দেশের জনগণ তথা ব্যবসায়ীগণ বিশেষ করে ব্যবসা করতে আগ্রহী এবং দেশ প্রেমী প্রবাসী, যাদের মধ্যে দেশের উন্নয়ন করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে তাদের আন্তরিক ইচ্ছা ও চেষ্টা বা আগ্রহেই জাপানের বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সে সকল দেশে বিনিয়োগ করে তাদের দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে সহায়ক হয়েছে।

তাদের সাথে আমাদের তুলনা করলে আমার জানা মতে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বা দূতাবাসে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যা করা দরকার তা সঠিকভাবে করছে না। পাশাপাশি জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা তো আরো পিছিয়ে। তারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে জাপানে নানা কাজেই সময় দেন বেশি। দেখে মনে হয় তাদের কাছে দেশের চেয়ে দল বড়, তার চেয়ে বড় নিজের পকেট। যে কারণে এতো বড় বিনিয়োগকারী দেশে বসবাস করেও সফলতার সাথে নিজেরা দেশের জন্য তেমন কিছু করতে পারছেন না। এমনকি জাপানের ব্যবসায়ীদেরও দেশে বিনিয়োগে ততটা আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ তারা।

এমন এক দেশে থেকে তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জাপানী ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোকে উৎসাহী করতে পারেনি। যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়েছে তারা শতস্ফূর্ত ভাবে নিজেরাই গিয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে তাদের বাংলাদেশে কাজ করে অধিকাংশের কাজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে নানা ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা। কেউ কেউ দেশে কাজ করতে গিয়ে তাদের মূলধন ফেলে চলে এসেছে। যদিও এর ব্যতিক্রমও আছে তবে আমাদের দেশকে ভালোবেসে ইনভেস্ট করতে গিয়ে নানা কারণে ব্যবসা গুটিয়ে সব ফেলে রেখে চলে আসাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। উচিৎ ছিল এদের কোনোভাবে সাহায্য সহযোগিতা এবং পরামর্শ করে বিনিয়োগে ধরে রাখা। এই কাজটি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের দ্বারাই সম্ভব ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি। এমন এক দেশে থেকে তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জাপানী ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোকে উৎসাহী করতে না পারার পিছনে কিছু কারণ অবশ্যই রয়েছে। সেসব খুঁজে বের করা আবশ্যক।

যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়েছে তারা শতস্ফূর্ত ভাবে নিজেরাই গিয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে তাদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে নানা ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা। কেউ কেউ দেশে কাজ করতে গিয়ে তাদের মূলধন ফেলে চলে এসেছে। যদিও এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। তবে আমাদের দেশকে ভালোবেসে ইনভেস্ট করতে গিয়ে নানা কারণে ব্যবসা গুটিয়ে সব ফেলে রেখে চলে আসাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। উচিৎ ছিল এদের কোনোভাবে সাহায্য সহযোগিতা এবং পরামর্শ করে বিনিয়োগে ধরে রাখা। এই কাজটি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসাীদের দ্বারাই সম্ভব ছিল, কিন্তু তারা তা করে নি।

গত প্রায় দুই দশক আগে জাপান প্রবাসী কিছু ব্যবসায়ী দেশের সাথে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে এবং জাপানি বিনিয়োগকারীদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলার মানসে সংগঠিত হয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে পদের লোভে তাদের মধ্যেই কতিপয় ব্যবসায়ীর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে নতুন ভাবে গঠিত হয় বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন জাপান। এখানেও দেশের রাজনীতির প্রভাব আর পদের লোভ কাজ করায় সংগঠনটি আলোর মুখ দেখেনি বা ভালো কোন কাজ করতে সক্ষম হয়নি। ফলে নীতিগত কারণে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সাথে কাজ করতে গিয়ে সংগঠনটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। বলে রাখা ভালো এখানে সুবিধা ভোগী হন টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তখনকার রাষ্ট্রদূত। যা দেশ প্রেমীদের কাছে মোটেই কাম্য ছিল না। এমনটা না হলে উক্ত সংগঠন দেশে জাপানী বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অনেক প্রতিষ্ঠানকেই নিয়ে যেতে বা আগ্রহী করে তুলতে পারতেন।

দীর্ঘদিন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন জাপান নামের সংগঠনটি ঘুমন্ত থাকলেও এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর কালে তাঁর সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর উপস্থিতিতে এবং এরিসা লিমিটেড এর কর্ণধার ডঃ মাসুদ খান (পি এইচ ডি)-র মধ্যস্ততায় উক্ত ব্যবসায়ীদের দু'টি গ্রুপ এক সাথে বসে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সব কিছু আলোচনা করার পর দুই গ্রুপ এক হয়ে দেশের কথা ভেবে নতুন করে আবার কাজ করতে সম্মত হন। এতে পুরো জাপানে বাঙালি কমিউনিটিতে বিশাল ভালো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি। যা দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি জাপানি বিনিয়োগকারী যেতে সহায়ক হবে।

 

 

পি আর প্ল্যাসিডঃ জাপান প্রবাসী লেখক - সাংবাদিক
সম্পাদক-বিবেকবার্তা